সোমবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:১৩ পূর্বাহ্ন
ধর্ম ডেস্ক:
আল্লাহতায়ালা যুগে যুগে মানবজাতির পথ প্রদর্শনের অসংখ্য নবী-রাসুলকে কিতাব দিয়ে পাঠিয়েছেন। তারই ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ কিতাব কোরআন মাজিদ দিয়ে পাঠিয়েছেন। কেয়ামতের আগ পর্যন্ত এটাই মানবজাতির সংবিধান। যারা এর আলোকে নিজেদের জীবন পরিচালনা করবে, তারাই পরকালে মুক্তি পাবে। আর একজন মুমিনের সমগ্র জীবন তো কোরআন অনুযায়ী চলতে হবে, এটা তার দায়িত্ব। তার আরও দায়িত্ব হলো কোরআন মাজিদ তেলাওয়াত করা, কোরআন নিয়ে চিন্তা গবেষণা করা এবং এর বিধান অনুযায়ী নিজেকে পরিচালনা করা। কোরআনের বিধানের ওপর আমল করলে যেমন সওয়াব পাওয়া যায়, ঠিক তেমনি কোরআন তেলাওয়াতের ফজিলত রয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘মুমিন তো তারাই, আল্লাহর স্মরণে তাদের দিল কেঁপে ওঠে, তাদের সামনে আল্লাহর বাণী উচ্চারিত হলে তাদের ইমান বৃদ্ধি পায়, তারা আল্লাহর ওপর ভরসা করে, নামাজ কায়েম করে এবং আল্লাহ প্রদত্ত রিজিক থেকে ব্যয় করে। বস্তুত এরাই হচ্ছে সত্যিকারের মুমিন। তাদের জন্য আল্লাহর কাছে খুবই উচ্চ মর্যাদা রয়েছে আরও রয়েছে ক্ষমা এবং উত্তম রিজিক। -সুরা আনফাল : ২-৪
বর্ণিত আয়াতে কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে ইমান বৃদ্ধি পাওয়ার কথা বলা হয়েছে। হজরত উসমান (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ওই ব্যক্তি, যে নিজে কোরআন শেখে এবং কোরআন শেখায়। -সহিহ বোখারি
কোরআন তেলাওয়াতকারীর মর্যাদা : হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যারা উত্তমরূপে কোরআন তেলাওয়াত করবে, তারা থাকবে অনুগত সম্মানিত ফেরেশতাদের সঙ্গে। আর যারা কোরআন পড়তে গিয়ে আটকে যায় এবং কষ্ট হয় তার জন্য রয়েছে দ্বিগুণ সওয়াব।’ -সহিহ মুসলিম : ৭৯৮
বর্ণিত হাদিসে সুন্দর করে তেলাওয়াতকারীর যেমন সওয়াবের কথা বলা হয়েছে, তেমনি যারা ভালো করে পড়তে পারে না তাদের তেলাওয়াতে দ্বিগুণ সওয়াবের কথা বলা হয়েছে। তাই যাদের তেলাওয়াত পুরোপুরি বিশুদ্ধ নয়, তাদের হতাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই। বরং শুদ্ধ করার চেষ্টা করতে হবে। অন্য হাদিসে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি কোরআন মাজিদের একটি হরফ পড়বে সে দশটি নেকি পাবে।
নবী কারিম (সা.) বলেন, দুটি জিনিস ছাড়া হিংসা বৈধ নয়। এক. আল্লাহ একজনকে কোরআন শেখার তওফিক দিয়েছেন, ফলে সে দিনরাত তেলাওয়াত করে। এটা দেখে তার প্রতিবেশী আফসোস করে বলে, সে যেমন কোরআন পড়ে আমি যদি তেমন পারতাম, তাহলে তার মতো আমিও আমল করতাম। দুই. আল্লাহ একজনকে সম্পদ দিয়েছেন, তা সে ন্যায়ের পথে খরচ করে। তা দেখে একজন বলে হায়! আমার যদি তার মতো সম্পদ থাকত, তাহলে আমিও তার মতো খরচ করতে পারতাম। -সহিহ বোখারি : ৫০২৬-৪০৩৮
আল্লাহর রাসুল এবং সাহাবায়ে কেরাম প্রচুর পরিমাণ কোরআন তেলাওয়াত করতেন। তারা নামাজের বাইরে নির্দিষ্ট একটা সময় প্রত্যকে তেলাওয়াতের জন্য রাখতেন। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, নবীজী (সা.) দাঁড়িয়ে এত কোরআন তেলাওয়াত করতেন যে, তার পা মোবারক ফুলে যেত। -সহিহ মুসলিম : ২৮১৯
আর এ কথা জানা যে, অসংখ্য অমুসলিম নবী করিম (সা.) ও সাহাবায়ে কেরামের তেলাওয়াত শুনেই ইসলাম গ্রহণ করেছে।
পরকালে তেলাওয়াতকারীর ফজিলত : দুনিয়ায় কোরআন তেলাওয়াতকারীর অন্তরে প্রশান্তি মেলে। সেই সঙ্গে আরও নানাবিধ মর্যাদা লাভ করে। আর পরকালেও রয়েছে তার জন্য অসংখ্য মর্যাদা ও ফজিলত। হজরত আবু উমামা বাহিলা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তোমরা কোরআন তেলাওয়াত করো, কেননা কিয়ামতের দিন কোরআন তার সাহিবের (ধারক-বাহক) জন্য সুপারিশ করবে। -সহিহ মুসলিম : ৮০৪
অন্য হাদিসে আছে, কোরআন তেলাওয়াতকারী যতক্ষণ তেলাওয়াত করবে, ততক্ষণ সে জান্নাতের সুউচ্চ ভবনে সমাসীন হতে থাকবে।
ভয়েস/আআ